অনলাইন সীমান্তবাণী ডেস্ক : ভারতের পশ্চিমবঙ্গের রাজধানী কলকাতার আরজি কর হাসপাতাল ও মেডিক্যাল কলেজের নিরাপত্তায় কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েনের নির্দেশ দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। হাসপাতালের কর্তব্যরত অবস্থায় তরুণী চিকিৎসকের ধর্ষণ-খুনের ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে এই নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ।
চিকিৎসকের ধর্ষণ-খুনের ঘটনায় আজ (মঙ্গলবার) সলিসিটার জেনারেল তুষার মেহতার আবেদনের শুনানি হয় প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়ের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের একটি বেঞ্চ। একজন নারী চিকিৎসক তার নিজের কর্মস্থলে পাশবিক নির্যাতনের শিকার হওয়ায় শুনানিতে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানায় ভারতের সর্বোচ্চ আদালত। আদালতের মতে, পশুর মতো অত্যাচার করা হয়েছে ভুক্তভোগীর সঙ্গে। এই ঘটনা রীতিমত ভয় জাগোনোর মতো বলেও মন্তব্য করেছে আদালত।
প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড় বলেন, “আরজি করের ভয়ংকর ও ন্যক্কারজনক। এই ঘটনার পর এই দেশে তরুণ, তরুণী চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের সুরক্ষা নিশ্চিত করাই প্রধান লক্ষ্য। সংবিধান সবাইকে সমান অধিকার দিয়েছে। তা সত্ত্বেও মহিলারা কাজের জায়গায় সুরক্ষিত হবেন না কেন? দুঃখজনক ঘটনা হল নির্যাতিতার পরিচয়, ছবি, ভিডিয়ো প্রচার করা হয়েছে। কেন আত্মহত্যা বলে ঘোষণা করা হল? নির্যাতিতার পরিবারকে ৪ ঘন্টা অপেক্ষা করিয়ে রাখা হয়েছে! সন্ধ্যা পর্যন্ত এফআইআর করা হল না! রাত সাড়ে ৮টায় বডি পরিবারের হাতে দেওয়া হল আর এফআইআর রুজু হল ১১টা৪৫- এ? অত্যন্ত সিরিয়াস ব্যাপার। প্রিন্সিপাল পদত্যাগ করার পর সঙ্গে সঙ্গেই অন্য হাসপাতালের প্রিন্সিপাল করা হল! হাসপাতালের প্রিন্সিপালের ভূমিকায় ক্ষুব্ধ শীর্ষ আদালত। হাসপাতালে যেভাবে ভাঙচুর করা হল, তা মেনে নেওয়া যায় না।”
শুনানির সময় বিচারপতিদের পর্যবেক্ষণে বলা হয়, “৭০০ আবাসিক চিকিৎসকের মধ্যে বেশিরভাগই নিরাপত্তার অভাব বোধ করায় চলে গেছেন। ৩০ থেকে ৪০ জন মহিলা, ৬০ থেকে ৭০ জন পুরুষ চিকিৎসক রয়েছেন। শুধু নিজেদের পড়াশোনা নয়, পরিষেবা দেওয়ার স্বার্থে সব চিকিৎসকের হাসপাতালে ফিরে আসা উচিত। তাই আরজি কর হাসপাতালে পর্যাপ্ত পরিমাণে সিআইএসএফ ও সিআরপিএফ মোতায়েন করতে হবে।”
এদিন কলকাতা পুলিশ ও পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য প্রশাসনের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তোলে সুপ্রিম কোর্ট। আদালত বলেছে, অপরাধ সংঘটিত হওয়ার জায়গায় সুরক্ষা দেয়ার দায়িত্ব পুলিশের। হাসপাতালের ভেতরে দুষ্কৃতিকারীরা কীভাবে ভাঙচুর চালাল?
আরজি কর হাসপাতালের সাবেক অধ্যক্ষ সন্দিপ ঘোষের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তোলা হয় আদালতে। ডিভিশন বেঞ্চ বলেন, এই ঘটনা কীভাবে আগেই আত্মহত্যা বলে দাবি করেছিলেন।
এদিন সাত সদস্যের একটি টাস্কফোর্স গঠন করে দেয় সুপ্রিম কোর্ট। চিকিৎসকদের শারীরিক, মানসিক সুরক্ষা নিশ্চিত করতে সব উদ্যোগ নেবে এই টাক্সফোর্স।
৯ আগস্ট কলকাতার আরজি কর হাসপাতালের বক্ষব্যাধি বিভাগে রাতের ডিউটি করার সময় একজন নারী চিকিৎসক পাশবিক নির্যাতনের শিকার হয়ে খুন হন বলে অভিযোগ উঠে। এরপর থেকেই নারী সুরক্ষার দাবিতে গোটা ভারতজুড়ে শুরু হয়েছে নাগরিক আন্দোলন। কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশে মামলাটি তদন্ত শুরু করে সিবিআই। শনিবার সুপ্রিম কোর্ট সুয়োমুটো ভাব মামলাটি গ্রহণ করেন। মঙ্গলবার সেই মামলার প্রাথমিক শুনানি হয়।
Leave a Reply